ড্রাগন ফলের উপকারিতা – শরির সুস্থ রাখার জন্য বর্তমানে ফলের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ফলের নাম হলো ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফল খেতে অনেক বেশি মিস্টি বা অমৃত না হলেও এটা আমাদের শরিরের অনেক এন্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়।
শরিরের রক্ত শুন্যতা দূর করতে বর্তমানে ডাক্তার রা ড্রাগন ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। অসুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে ড্রাগন ফল কে অনেক বেশি কার্যকরি স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে ধরা হয়। আমরা অনেকেই হয়ত ড্রাগন ফল খেয়েছি কিন্তু এর উপকারিতা বা পুস্টিগুন সম্পর্কে জানি না।
বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো – ড্রাগন ফল সম্পর্কে বিস্তারিত। ড্রাগন ফল কিভাবে এসেছে এই ফলের মধ্যে কি কি পুস্টিগুন বিদ্যমান আছে। কেন আপনার ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত ও ড্রাগন ফলের অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আর্টিকেল। তাই আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন।
ড্রাগন ফল কি
ড্রাগন ফলের চাষ প্রথমদিকে চীনে করা হতো। চীন থেকেই মূলত ড্রাগন ফলের আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রায় সকল দেশে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাষ শুরু করা হয়। বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবে বাংলাদেশেও ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। ড্রাগন ফল যা চীনে পিতায়া নামে পরিচিত।
ড্রাগন ফলের পরিচয়
বিশ্বের গ্রীস্মমন্ডলীয় প্রায় সকল দেশে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ড্রাগন ফল অনেক ধরণের হয়ে থাকে। ড্রাগন ফল সাধারণত ক্যাকটাস প্রজাতির একটি ফল। ড্রাগন ফলের মধ্যে কয়েক ধরণের ফল পাওয়া যায় যেমন – মিস্টি ড্রাগন, সাদা ড্রাগন, লাল ড্রাগন, হলুদ ড্রাগন ইত্যাদি।
বিভিন্ন দেশে এই ফল কে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। সাধারনত দক্ষিন এশিয়াতে এটা ড্রাগন ফল নামেই বেশি চিনে মানুষ তবে থাইল্যান্ডে ড্রাগন স্ফটিক নামে পরিচিত।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। ড্রাগন ফলে খনিজ, ভিটামিন, এন্ট্যিওক্সিডেন্ট ইত্যাদি বিদ্যমান থাকায় শরিরের নানান ধরণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
নিচে আমরা এর বিস্তারিত ড্রাগন ফলের উপকারিতা গুলো দিয়ে দিলাম –
১। ওজন কমাতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল
শরিরের অতিরিক্ত ওজন বা চর্বি নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের মেডিসিন সেবন করেন, ডায়েট করেন। তবে আপনি কি জানেন ডায়েট এর পাশাপাশি আপনি যদি ড্রাগন ফল খান এটা আপনার শরিরের অতিরিক্ত ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুন 👇
- মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
- ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা ও অপকারিতা
- জেনে নিন চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা
- কাঠ বাদাম এর উপকারিতা
ড্রাগন ফলের মধ্যে ফ্যাট একদম নেই যার ফলে আপনার ওজন বাড়ার কোনো চান্স নেই অন্যদিকে এটা আপনার শরিরের অতিরিক্ত ওজন কে কমাতে সাহায্য করবে। ওজন কমানো নিয়ে যারা চিন্তায় ভুগছেন তারা চাইলে ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
২। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফলের মধ্যে ফাইবার বিদ্যমান থাকায় এটা ডায়াবেটিস এর রোগীদের জন্য নিরাপদ একটি ফল। রক্তে সুগার এর পরিমান কমাতে বা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল। যারা ডায়াবেটিস এর রোগী আছেন তারা চাইলে এই উপকারি ফল টি খেতে পারেন। ড্রাগন ফল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে অনেক বেশি কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।
৩। হার্ট সুস্থ রাখে ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফল কোলেস্ট্ররল কমাতে সক্ষম। হার্ট সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে আমাদের শরিরে কোলেস্ট্ররল অনেক বেশি জরুরি। ড্রাগন ফল ভালো কোলেস্ট্ররাল বাড়াতে সক্ষম। ড্রাগন খাওয়ার ফলে আমাদের হার্টের সুস্থতা অনেক টা নিশ্চিত করা যায়।
৪। হজমে সাহায্য করে ড্রাগন ফল
আমাদের মধ্যে অনেকের হজম শক্তি অনেক দূর্বল এ কারণে এসিডিটি সমস্যায় ভুগতে হয়। কিন্তু ড্রাগন ফল আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের মধ্যে ফাইবার রয়েছে যা আমাদের পাকস্থলি পরিস্কার করে।
৫। চুল পড়া রোধে কাজ করে ড্রাগন ফল
চুলের গোড়া শক্ত ও কোষগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য ড্রাগন ফল অনেক ভাবে কাজ করে। ড্রাগন ফলের রস আপনি যদি চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলেন শ্যাম্পু করে এতে আপনার চুল পরা বন্ধ হবার সম্ভাবনা থাকে।
৬। ক্যান্সার প্রতিরোধে ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ ভালো ভাবে কাজ করে থাকে। ড্রাগন ফলের মধ্যে এন্ট্যিওক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে যা ক্যান্সারের কোষ গুলো কে শেষ করে দিতে পারে। জানা যায় যে – একটি ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রায় ৯০ % এন্ট্যিওক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে।
৭। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল
বয়সের ভাড়ে আমাদের শরিরের ত্বকের উজ্জ্বলতা দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। ড্রাগন ফলের মধ্যে ভিটামিন – সি প্রচুর পরিমানে থাকে যা আমাদের ত্বকের কোষ গুলো জীবিত রাখতে সাহায্য করে।
৮। হাড় শক্ত করে ড্রাগন ফল
আমাদের শরিরের হাড় শক্ত করার ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবে কাজ করে ড্রাগন ফল। ম্যাগনেসিয়াম শরিরের হাড় কে শক্ত করতে সাহায্য করে আর এই ম্যাগনেশিয়াম ড্রাগন ফলের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।
৯। মুখের ব্রণ দূর করে ড্রাগন ফল
ভিটামিন সি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। একটি ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যদি আপনার ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে ড্রাগন ফল খেতে পারেন এটা আপনাকে অনেক উপকার করবে ব্রন দূর করার ক্ষেত্রে।
১০। কিডনির সুস্থতায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল। কিডনি কে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন পরে পটাশিয়াম এর যা একটা ড্রাগন ফলের মধ্যে পাওয়া যায়। কিডনি কে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে ড্রাগন ফল খেতে পারেন এটা কিডনি সুস্থ রাখতে অনেক সাহায্য করবে।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
যে কোনো কিছুই অতিরিক্ত করা কখনোই ভালো নয়, ঠিক একই ভাবে কোনো কিছু অতিরিক্ত খাওয়া মোটেও ভালো নয়। ড্রাগন ফল অতিরিক্ত না খাওয়া ভালো। ড্রাগন ফল যদি অধিক খান তাহলে এর উপকার এর দিকের চেয়ে অপকারিতা গুলো বেশি দেখা যায়।
আরো পড়ুন 👇
সাধারণত ড্রাগন ফলে তেমন কোনো অপকারিতার দিক নেই, তবে অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে নিম্নোক্ত সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে –
- ডায়রিয়া
- এলার্জি
এ ছাড়াও অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি আপনি কোনো রোগের জন্য ইতিমধ্যে মেডিসিন গ্রহন করেন তাহলে ডাক্তার এর পরামর্শ নিবেন যে ড্রাগন ফল টি আপনার শরিরের জন্য উপকারি কি না বা খাওয়া যাবে কি না। এক সাথে অতিরিক্ত ড্রাগন ফল না খেয়ে অল্প অল্প বিভিন্ন সময়ে অথবা কিছুদিন পর পর খেলে এর উপকারিতার দিক গুলো পাওয়া যায়।
সাদা ড্রাগন ফলের উপকারিতা
সাদা ড্রাগন অথবা লাল ড্রাগন উপকারিতা প্রায় একই ধরণের হয়ে থাকে। লাল ড্রাগনের ক্ষেত্রে সামান্য বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। সাদা ড্রাগনের উপকারিতা গুলো হলো –
- চুল পড়া রোধ করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- হার্ট সুস্থ রাখে।
- ব্রন দূর করে।
- শরির সুস্থ রাখে।
- কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- হাড় শক্ত করে
লাল ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
ড্রাগন ফলের উপকারিতা গুলো প্রায় একই এ ক্ষেত্রে লাল ড্রাগন গুলোতে উপাদান এর মাত্রা সামান্য বেশি থাকে। সাদা ড্রাগন বা ড্রাগন ফলের যত উপকারিতা রয়েছে সেটা লাল ড্রাগনে ও পাবেন। যদি লাল ড্রাগন বেশি পরিমানে খান তবে প্রসাব সামান্য লাল হতে পারে।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফল অনেক ভাবে খাওয়া যায়, আপনি চাইলে নাস্তার সাথে অথবা সালাদের সাথে ড্রাগন ফল খেতে পারেন। অথবা একটি ফলের মতো এটা কেটে খেতে পারেন। ড্রাগন ফল খাওয়ার আলাদা কোনো নিয়ম নেই যে এটা সেভাবেই খেতে হবে। এটা কিভাবে খাবেন এটা একান্তই আপনার ব্যাপার। যদি আপনি প্রথমবার এর মতো ড্রাগন ফল খাবেন ভাবছেন তাহলে নিচের দেয়া নিয়ম অনুযায়ী খেতে পারেন –
- প্রথমে একটি ড্রাগন ফল হাতে নিন যেটা পাকা বা খাওয়া যাবে এমন।
- ছুড়ি অথবা কিছু একটা দিয়ে মাঝ বরাবর ফল টি কে দুই ভাগ করুন।
- এবার আমের মত ফল টির ছোলা উঠিয়ে নিন ও ভিতরের নরম অংশ আলাদা করে ফেলুন।
- এবার টুকরা টুকরা করে পিস করে একটা বাটিতে নিয়ে নিন।
- এবার পরিবেশন করে খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন।
এভাবেই আপনি ড্রাগন ফল একদম শুরু থেকেই পরিবেশন করতে পারেন। ফল কাটার পূর্বে হাতে হ্যান্ড গ্লাবস পরে নিতে পারেন অন্যথায় আপনার হাত একদম লাল হয়ে থাকবে স্বাভাবিক পানি দিয়ে সেটা উঠাতে পারবেন না। তবে না উঠলেও এটা দিয়ে কোনো ক্ষতির আশংকা নেই।
ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
ড্রাগন ফলের খোসা আমরা অনেকেই ফেলে দেই। ফলের মতো ড্রাগন ফলের খোসা ও অনেক ধরণের উপকারি দিক রয়েছে। ড্রাগন ফলের ছোলা দিয়ে আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরণের মাস্ক বানাতে পারেন রুপচর্চার ক্ষেত্রে। চুলের পুস্টিগুন বাড়াতে এর ছোলা অনেক ভাবে ব্যবহার করা যায় বিভিন্ন উপকরন এর সাথে। তবে এগুলো পরিক্ষিত না হওয়ার কারণে এটা বলা মুশকিল যে এটা কতটুকু কাজ করতে সক্ষম হবে।
ড্রাগন ফলের পুস্টিগুন
আমরা ইতিমধ্যে ড্রাগন ফলের উপকারিতা অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানলাম। চলুন এবার জেনে নেই ফলের পুস্টিগুন সম্পর্কে।
আরো পড়ুন 👇
একটি ড্রাগন ফলের মধ্যে যে সকল উপাদান পাওয়া যায় –
- আয়রন
- শর্করা
- পটাশিয়াম
- ফ্যাট
- ক্যালরি
- থায়ামিন
- আশ
- ক্যালশিয়াম
- ভিটামিন বি
- পানি
- ফসফরাস
- ভিটামিন সি
এ ছাড়াও বেশ কিছু উপাদান স্বল্প পরিমানে বিদ্যমান আছে ড্রাগন ফলের মধ্যে। একটি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফল আমাদের শরিরের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারি ও নানান রোগ থেকে বাচতে আমাদের শরির কে সাহায্য করে থাকে।
ড্রাগন ফল সম্পর্কে কিছু প্রশ্নউত্তর
ড্রাগন ফল খেলে কি রক্ত হয়?
রক্ত শুন্যতা দূর করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উপকারি হলো ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফল শরিরে আয়রন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যদি আপনার রক্ত শুন্যতা থাকে তাহলে ড্রাগন ফল খেতে পারেন এটা অনেকটা রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এ ছাড়াও রক্তকনিকা গুলো থেকে দুষিত পদার্থ ও দূর করতে পারে।
ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি?
ড্রাগন ফলের দাম কখনো একরকম থাকে না। দাম সবসময় পরিবর্তনশীল। তবে বর্তমানে ১ কেজি ড্রাগন ফল আপনি ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ক্রয় করতে পারবেন।
১ কেজি ড্রাগন ফল কত পিস পাওয়া যায়?
সাধারণত ১ কেজি তে ৩-৪ টি ড্রাগন ফল পাওয়া যায়।
ড্রাগন ফল কখন পাওয়া যায়?
ড্রাগন ফল সাধারণত বছরে ৪ থেকে ৫ বার পাওয়া যায়।
ড্রাগন ফল সম্পর্কে আমাদের শেষ কথা
ড্রাগন ফলের উপকারিতা আর্টিকেলে আমরা এর উপকারিতা ও অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানালাম। আর্টিকেল টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন, ধন্যবাদ।