কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী

5/5 - (1 vote)

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ কি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য নিয়ে আজকের এই পোস্ট। প্রতিটি দেশে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকে, যেটি পুরো দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। অনেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে জানেন না। এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি

একটি দেশের সকল বাণিজ্যিক এবং সাধারণ ব্যাংককে যে ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং উক্ত দেশের পুরো ব্যাংকিং সেক্টর পরিচালনা করে থাকে, সেটিই হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে

সরকারী মালিকানায় যে ব্যাংক তৈরি এবং পরিচালিত হয়, পুরো দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রন করে এবং পুরো দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। প্রতিটি দেশের একটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশেও একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম হচ্ছে “বাংলাদেশ ব্যাংক” ।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আমাদের দেশের পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমাদের দেশে যেসব সরকারী এবং বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংক রয়েছে, এ সকল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রন করা হয়ে থাকে। পুরো দেশের অর্থনীতির চালক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তেমনি, প্রতিটি দেশের অর্থনীতির প্রধান চালক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে।

📌 আরো পড়ুন 👇

আশা করছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে বুঝতে পেরেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে না, মুদ্রা ছাপানো, সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করা সহ সবকিছুই করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বলা হয়ে থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী

একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনেক ধরণের কার্যাবলী পরিচালনা করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলীসমূহ নিয়ে নিচে আরও বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করেছি। চলুন, জেনে নেয়া যাক।

নোট ইস্যু এবং নিয়ন্ত্রণ

একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের নোট ইস্যু এবং নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যেমন – বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৫,১০,২০,৫০,১০০,৫০০,১০০০ টাকার নোট ইস্যু করা হয় এবং নিয়ন্ত্রন করা হয়ে থাকে। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেই যেকোনো নতুন নোট ইস্যু করতে পারে না। এজন্য, নোট ইস্যু করার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া সমপরিমাণ স্বর্ণ বা বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখতে হয়।

সরকারের ব্যাংক

সরকারের আয় এবং ব্যয় সহ যাবতীয় লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকার আয় করে থাকে রাজস্ব সহ আরও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। আবার সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন সহ আরও অনেক ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় করতে হয়। এসকল লেনদেন করার জন্য সরকার একটি ব্যাংকের সাহায্য নিয়ে থাকে। এটাই হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের হয়ে সরকারের সব ধরণের লেনদেন করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকার অর্থ জমা রাখে এবং প্রয়োজনের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণও নিয়ে থাকে। অর্থাৎ, সরকারের ব্যাংক হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

সকল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক

একটি দেশের মাঝে অনেক ব্যাংক থাকে। সকল ব্যাংক তাদের ইচ্ছেমতো সব ধরণের লেনদেন করতে পারে না। সকল ব্যাংকের লেনদেন সমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রন করে থাকে। তেমনি প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক উক্ত দেশের সকল ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন করে থাকে। যদি কোন ব্যাংক নিয়ম-নীতি বহির্ভূত কাজ করে থাকে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উক্ত ব্যাংকের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে।

এছাড়াও, একটি ব্যাংক শুরু করার সময় বাধ্যতামূলকভাবে উক্ত ব্যাংকের আমানতের কিছু অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট জমা রাখতে হয়। তবে, ব্যাংকগুলো প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। অর্থাৎ, সকল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে উক্ত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঋনের শেষ আশ্রয়স্থল

বিভিন্ন বানিজ্যিক ব্যাংক আমানত গ্রহণ করে থাকে জনগনের কাছে থেকে। এরপর, জনসাধারণের জমানো টাকার কিছু অংশ নিজেদের কাছে তারল্য রেখে প্রায় সবটুকু বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে দেয়। এমতাবস্তায়, অন্য কেউ যদি ঋণ চাইতে আসে এবং ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকে, তখন ব্যাংকটি কী করবে? অন্যান্য যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে সুদের বিনিময়ে ঋণ নিবে। কিন্তু, সেসব ব্যাংক থেকেও যদি ঋণ নিতে না পারে, তখন কী করবে?

📌 আরো পড়ুন 👇

শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে যাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণ চাইতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ফিরিয়ে দিবে না। তাই, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয়ে থাকে। যেকোনো ব্যাংক ঋণ না পেলে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গিয়ে থাকে।

ঋণ নিয়ন্ত্রণ

জনগনকে ঋণ বেশি পরিমাণে দেয়া হলে বাজারে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এমতাবস্থায় মুদ্রাস্ফিতি দেখা যায়। যেখানে, বাজারে টাকা বেশি থাকে, তাই জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি হয়। আবার, যখন ঋনের পরিমাণ কম হবে এবং বাজারে টাকার পরিমাণ কম হবে, তখন বাজারে টাকা কম থাকবে এবং জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে। এ অবস্থাকে বলা হয়ে থাকে মুদ্রা সংকোচন। এই দুইটি পরিস্থিতির একটিও মঙ্গলজনক নয়। তাই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হচ্ছে এই দুইটি পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণ করার কারণে দেশের বাজারে মুদ্রাস্ফিতি এবং মুদ্রা সংকোচন সমস্যা দেখা যায় না।

বিনিময় হার নির্ধারণ

একটি দেশের মুদ্রার সঙ্গে অন্য দেশের মুদ্রার বিনিময় করার কাজটি করা হয় বিনিময় হার নির্ধারণ করার মাধ্যমে। অর্থাৎ, আমাদের বাংলাদেশের ১ টাকা সমান অন্য দেশের কত পরিমাণ মুদ্রা, এসবকিছু নির্ণয় এবং নির্ধারণ করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিটি দেশ অন্য দেশের সাথে বিভিন্ন ধরণের বাণিজ্য করে থাকে। অর্থাৎ, আমদানি এবং রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এমতাবস্থায়, এক দেশের মুদ্রার মান সমান অন্য দেশের মুদ্রার মানের পার্থক্য নির্ধারণের কাজটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ – আমেরিকান ১ ডলার সমান বাংলাদেশের কত টাকা তা নির্ধারণ করার কাজটি করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তেমনি, অন্যান্য দেশের মুদ্রার মানের সাথে বাংলাদেশের মুদ্রার মান নির্ধারণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসব ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও অনেক কার্যাবলী পরিচালনা করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যমণি। অর্থ বা ব্যাংকিং সংক্রান্ত সব ধরণের কাজ সম্পাদন হয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে। তাই, একটি দেশের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্ব অনেক বেশি। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন‌উত্তর

আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম কি?

আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক। 

ব্যাংক কত প্রকার কি কি?

ব্যাংক প্রধারনত ৪ প্রকার। এগুলো হচ্ছে – সরকারী ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক, বিদেশী ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক। 

জনতা ব্যাংক লিমিটেড কি সরকারি?

হ্যাঁ, জনতা ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের সরকারী মালিকানাধীন একটি ব্যাংক। এটি আমাদের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা কয়টি?

প্রয়োজন অনুযায়ী একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একের অধিক শাখা হতে পারে। যেমন আমাদের দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি শাখা রয়েছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্দেশ্য কি?

একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য থাকে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা। কিন্তু, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হচ্ছে দেশের পুরো ব্যাংকিং সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে আমাদের মতামত

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তবে আশা করছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে সকল তথ্য এতক্ষণে জেনে গেছেন।

এছাড়াও, আরও কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে উল্লিখিত সাধারণত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলীগুলো দেখতে পারেন। অথবা, আরও বিস্তারিত জানতে কমেন্ট করুন। এতক্ষন প্রযুক্তির বাংলা ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

পোষ্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment