কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি, বাণিজ্যিক ব্যাংক কি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য কী এসব বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাঝে কি কি পার্থক্য রয়েছে না জানেন, তবে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি
যে ব্যাংক একটি দেশের পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করে, অন্যান্য সকল ব্যাংককে নিয়ন্ত্রন করে, নোট ছাপাই ও মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রন করে, তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যমণি হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, সুদের হার এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রন করে থাকে। আমাদের দেশেও একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রতিটি দেশের একটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। যে ব্যাংকটি উক্ত দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, মুদ্রা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করে এবং সুদের হার নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রন করে থাকে। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ, সরকারের আয়-ব্যয় সহ সব ধরণের কার্যাবলী পরিচালনা করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাণিজ্যিক ব্যাংক কি
জনসাধারণের নগদ অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে সেসব অর্থের কিছু অংশের নিজেদের কাছে জমা রেখে পুরোটি অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সুদের বিনিময়ে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে যেসব ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং মুনাফা অর্জন করে, সেসব ব্যাংকই হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংক ৩ ধরণের হয়ে থাকে। সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক, বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক।
📌 আরো পড়ুন 👇
সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মূলত সরকার কর্তৃক গঠিত এবং পরিচালিত হয়ে থাকে এবং সরকারের হয়ে সব ধরণের লেনদেন পরিচালনা করে থাকে। অপরদিকে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গঠিত এবং পরিচালিত হয়ে থাকে। বিদেশী ব্যাংকগুলো দেশে আসে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে অনেক। অনেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংককে একই মনে করে। কিন্তু, এই দুইটি ব্যাংকের কার্যাবলী এবং পরিচালনার ধরণ পুরো ভিন্ন। নিচে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করে দিয়েছি। চলুন, দেখে নেয়া যাক।
বিষয় | কেন্দ্রীয় ব্যাংক | বাণিজ্যিক ব্যাংক |
উদ্দেশ্য | কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে পুরো দেশের উন্নয়নে এবং দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে কাজ করে থাকে। সরকারের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত সকল লেনদেন পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও, সুদের হার নিয়ন্ত্রন, মুদ্রাস্ফিতি এবং মুদ্রা সংকোচন অবস্থা নিয়ন্ত্রন করতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে থাকে। | বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসাধারণের থেকে আমানত গ্রহণ করা এবং বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সুদের বিনিময়ে ঋণ প্রদান করা। ঋনের সুদ থেকে মুনাফা অর্জন করাই বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য। |
ব্যাংকার | কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সকল ব্যাংকের ব্যাংকার বলা হয়ে থাকে। একটি দেশের পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার মুলে থাকে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে ব্যাংক সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে নিয়ন্ত্রন করে থাকে এবং চাইলে যেকোনো ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে। | বাণিজ্যিক ব্যাংক শুধুমাত্র আমানতকারীদের ব্যাংক। অর্থাৎ, জনসাধারন এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকার হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক। |
নোট ছাপানো | কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে নোট ছাপাতে পারে। তবে নতুন নোট ছাপানোর জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এর নির্ধারণ করে দেয়া পরিমাণ অনুযায়ী স্বর্ণ বা বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখতে হয়। | বাণিজ্যিক ব্যাংক চাইলেই নোট ছাপাতে পারে না এবং এই ধরণের কোন ক্ষমতা নেই। বাণিজ্যিক ব্যাংক শুধু জনগনের থেকে আমানত গ্রহণ এবং উক্ত অর্থ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে থাকে। |
ঋণ প্রদান | কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। সরকারের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ দিয়ে থাকে। এছাড়াও, যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে ঋণ নিতে পারে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋনের শেষ আশ্রয়স্থল বলা হয় কেন্দ্রীয়ব্যাংককে। | বাণিজ্যিক ব্যাংক শুধুমাত্র বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে পারে। তবে, ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ দিতে পারে। অর্থাৎ, একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে ঋণ দিতে পারে। |
আমানত গ্রহণ | কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে গঠিত এবং পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রয়োজনে নতুন নোট ছাপাতে পারে। কিন্তু, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জনসাধারণের থেকে আমানত গ্রহণ করতে হয় না। | বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলী পরিচালনা করার জন্য এবং তহবিল সংগ্রহ করার জন্য জনগণের থেকে আমানত গ্রহণ করতে হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে চাইলে অর্থের যোগান দিতে হয় জনসাধারণের জমানো টাকা থেকে। |
জনসাধারণকে ঋণ প্রদান | কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জনসাধারনকে ঋণ দেয়া হয় না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার বা বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু, জনগণকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ প্রদান করে না। | বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক জনসাধারণকে ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আপনি যদি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত রাখেন, তবে চাইলে এই ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতা পারবেন। এছাড়াও, বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে থাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক। |
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার নির্ধারণ করা | অন্যান্য দেশের মুদ্রার সঙ্গে বাংলাদেশের মুদ্রার হার কত সেটি নির্ধারণ করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনই প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে থাকে। এছাড়াও, বিভিন্ন দেশের সাথে বানিজ্যে মুদ্রা বিষয়ক সহযোগিতা করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। | বাণিজ্যিক ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাজ হচ্ছে আমানত গ্রহণ করা এবং ঋণ প্রদান করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা। |
উপরে উল্লিখিত টেবিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য কি কি তা উল্লেখ করে দিয়েছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠন এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের গঠন এক না এবং এই দুইটি ব্যাংকের পরিচালনার ধরণও এক না। ব্যাংক দুইটির মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
📌 আরো পড়ুন 👇
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজ কি?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজ হচ্ছে পুরো দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করা, সুদের হার নিয়ন্ত্রন করা এবং নতুন নোট ছাপানো। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে কাজ করে এবং সরকারের হয়ে সব ধরণের লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কাজ কি?
বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কাজ হচ্ছে জনসাধারণের থেকে আমানত সংগ্রহ করা এবং বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস কি?
বাণিজ্যিক ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে ঋনের সুদ। বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে তাদের থেকে প্রাপ্ত সুদই হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস। এছাড়াও, বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ এবং অন্যান্য কার্যক্রম করেও বাণিজ্যিক ব্যাংক আয় করে থাকে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম কি?
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম হচ্ছে “বাংলাদেশ ব্যাংক” । বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি শাখা রয়েছে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে। এটি আমাদের দেশের পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক সম্পর্কে আমাদের মতামত
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য কি কি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টের মাঝে দুই ধরণের ব্যাংক নিয়েই বিভিন্ন ধরণের তথ্য উল্লেখ করে দিয়েছি। এই দুইটি ব্যাংকের কাজ কি সহ আরও অনেক তথ্য উল্লেখ করে দিয়েছি।
এছাড়াও, আরও কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই মন্তব্য করবেন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন প্রযুক্তির বাংলা ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।