মোবাইল ফোনকে আমরা প্রতিনিয়তই নানা কাজে ব্যবহার করি। তবে আপনি কি শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপকারিতা সম্পর্কে জানেন? শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আমরা জানি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজেই পাঠ্যপুস্তক, লেকচার নোট, গবেষণা সামগ্রী ইত্যাদি অ্যাক্সেস করা যায়। এছাড়াও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করা এবং ভিডিও লেকচার দেখা করা। যা পড়াশোনায় শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসে। কিন্তু এসব সুবিধার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে, যা পড়াশোনা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা
বর্তমানে ছোট-বড় প্রায় সকলেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সকলেই মোবাইল ফোনের নানা সুবিধা নিয়ে থাকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা অপরিসীম। যদি শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের সুবিধাগুলো সঠিক ভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে এদেশে শিক্ষার মান উন্নত করা সম্ভব।
নিম্নে শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা দেওয়া হলো:
- মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে শিক্ষার সুবিধা গ্রহন করতে পারে। এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বেশি লাভবান হবে।
- মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনলাইনের নানা সুবিধা ভোগ করতে পারবে। যেমন: শিক্ষামূলক অ্যাপস, ওয়েবসাইটে, ভিডিও, অনলাইন ক্লাস ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। ফলে শিক্ষার মান উন্নত হবে।
- মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। যেমন: ভিডিও তৈরি করা, অ্যানিমেশন তৈরি করা, গান তৈরি করা ইত্যাদি।
- মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। কোনো প্রশ্ন সমাধান করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতাগুলো শিক্ষার মান উন্নত করতে পারে।
📌 আরো পড়ুন 👇
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ব্যবহারে শিক্ষকদের করণীয়:
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ব্যবহারে শিক্ষকদের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যার ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।
যেমন:
- শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য এমন কিছু শিক্ষামূলক অ্যাপস, ভিডিও, ওয়েবসাইট, ইত্যাদি তৈরি করতে হবে। যাতে তারা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হয়।
- শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা, কুইজ, ইত্যাদি পরিচালনা করতে হবে। এবং তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা মূল্যায়ন করে পুরষ্কারের ব্যবস্থা করা।
- শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজ পরিচালনা করতে হবে। ফলে তাদের গবেষণায় দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
- শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা। এতে তারা শিক্ষকদের ঘনিষ্ঠ হবে পাশাপাশি পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হবে।
- শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারে বয়স বিবেচনা করতে হবে
- মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপকারিতা
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার বেড়েই চলেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তবে এসব সুবিধার পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপকারিতাও রয়েছে।
মোবাইল ফোন শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশোনায় অমনোযোগী করে তোলে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এক্টিভ থাকা, গেমস খেলা, অনলাইনে ভিড়িও দেখা ইত্যাদি করণে শিক্ষার্থীরা সহজেই মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এতে তারা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যেতে পারে।
শিক্ষাক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপকারিতাগুলি হল:
- মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে
- শিক্ষকদের কাজের ব্যাঘাত ঘটে
- অনলাইন গেম ও সামাজিক যোগাযোগের প্রতি আসক্ত হতে পারে
- অনৈতিক কাজে জড়িত হতে পারে
- ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়তে পারে
- স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে
উক্ত সমস্যাগুলো আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায়। এবার চলুন শিক্ষাক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপকারিতাগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগি থাকাটা খুবই জরুরি। কিন্তু ক্লাসে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। ফলে তাদের পাঠ বুঝতে অসুবিধা হয়। এবং ধীরে ধীরে তাদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
📌 আরো পড়ুন 👇
শিক্ষকদের কাজের ব্যাঘাত ঘটে
ছাত্র-ছাত্রীরা যদি ক্লাসে মোবাইল ব্যবহার করে তবে ক্লাসের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। যেমন ধরুন, শিক্ষক পাঠ দান করছেন আর অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ব্যবহার করছে, কথা বলছে, হাসা-হাসি করছে। এতে করে শিক্ষকের পাঠ দানে অসুবিধা হয়। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ দানে ঘাটতি থেকে যায়।
অনলাইন গেম ও সামাজিক যোগাযোগের প্রতি আসক্ত হতে পারে
করোনাকালীন এসাইনমেন্ট এবং অনলাইনে ক্লাস করার উদ্দেশ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়া হয়। আর তখন থেকেই তাদের মোবাইল ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে তারা বিভিন্ন প্রকারের গেমস এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে যায়। ফলে তারা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। এটি শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশাল আঘাত আনবে।
অনৈতিক কাজে জড়িত হতে পারে
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ভিডিও, ছবি ও লেখার মাধ্যমে তারা অনৈতিক কাজে জড়িত হতে পারে। এমনকি তারা শিশু অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক মূল্যবোধ নষ্ট হতে পারে।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়তে পারে
বর্তমানে সময়ে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নেই বললেই চলে। কেননা এই অনলাইনের যুগে আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের পরিচয় তৈরি করতে গিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করে ফেলি। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বেশি আগ্রহী। তারা নিজেদের তথ্য অনলাইনে শেয়ার করে আনন্দ পায়। যেটা পরবর্তীতে হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
📌 আরো পড়ুন 👇
এছাড়াও মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের তথ্য থাকে যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে এসব তথ্য অন্যদের হাতে পড়তে পারে।
স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নানা ধরনের রোগ দেখা যায়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ফলে তাদের রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না এবং তারা মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়াও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপকারিতাগুলি এড়ানোর উপায়
মোবাইল ফোনের কারণে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এজন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। যাতে তারা তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পারে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপকারিতাগুলি এড়াতে যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করাতে হবে:
- স্কুল ও কলেজগুলিতে মোবাইল ফোন ব্যবহারের নিয়ম-কানুন তৈরি করতে হবে। এবং সেই নিয়ম-কানুন কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
- ছাত্র-ছাত্রীদের এবং তাদের অভিভাবকদের মোবাইল ফোনের অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
- মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক বিষয়ের ওপর অ্যাপস ও গেম তৈরি করে তাদের সচেতন করতে হবে।
- শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ব্যবহারের সুবিধাগুলির পাশাপাশি অসুবিধাগুলোর প্রতি বিষেশ নজর দেওয়া উচিত। আশা করছি উক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের মতামত
মোবাইল ফোন ছোট-বড় সবাই ব্যবহার করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপকারিতা বিদ্যমান। আমাদের উচিত এসব বিষয়ে উপর লক্ষ্য রাখা।
আজকের আর্টিকেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা, অপকারিতা ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এসকল বিষয় যদি বুঝতে অসুবিধা হয় অথবা কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করতে পারেন। এতক্ষন প্রযুক্তির বাংলা ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।