তাওহীদ অর্থ কি? তাওহীদ কয়টি ও কি কি? তাওহীদের গুরুত্ব।

5/5 - (1 vote)

ইসলামের মূল স্তম্ভগুলোর মধ্যে তাওহীদ অন্যতম। তাওহীদ অর্থ আল্লাহর একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আনুগত্য করা।

তাওহীদে বিশ্বাসী না হলে আপনি ঈমানদার হতে পারবেন না। এজন্য তাওহীদ সম্পর্কে জানা জরুরি‌।

আপনি যদি তাওহীদ সম্পর্কে না জেনে থাকেন, তাহলে আজকের পোষ্টটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলে আমরা তাওহীদ অর্থ কি? তাওহীদ কয়টি ও কি কি? তাওহীদের গুরুত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করবো।

তাওহীদ কি

তাওহীদ শব্দের অর্থ হলো: ‘একত্ববাদ’।

ইসলামি পরিভাষায়, একমাত্র আল্লাহ তা’লাকেই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং ইবাদত ও আনুগত্যের যোগ্য একক সত্তা হিসেবে স্বীকার ও বিশ্বাস করাকে তাওহীদ বলা হয়।

তাওহীদের অর্থ কি

তাওহীদ অর্থ কি,

তাওহীদ অর্থ ‘একত্ববাদ’। তাওহীদ শব্দের অভিধনিক অর্থ হলো: এক, একক বা অদ্বিতীয়, এবং একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বশত্রু, এবং সর্বজীবের স্রষ্টা।

ইসলামি শরীয়াতের পরিভাষায় তাওহীদের অর্থ হলো: আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় তার কোনো শরিক নাই। তিনি সুমহান সত্তা ও একক ক্ষমতার মালিক। এসকল বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তা প্রতিষ্ঠিত করা।

তাওহীদ কাকে বলে

আপনি কি তাওহীদ কাকে বলে জানতে চান? তাদের জন্য নিম্নে তাওহীদের সংঙ্গা দেওয়া হলো।

সংঙ্গা হলো: আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের আনুগত্য করাকে তাওহীদ বলে।

📌আরো পড়ুন 👇

তাওহীদে বিশ্বাস ব্যতীত কোনো ব্যক্তিই ইমান বা ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। এটি ইসলামে গ্রহনযোগ্য নয়। 

শরীয়তে একজন বান্দা বা একজন মুসলমান একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য স্বীকার করবে এবং তা প্রতিষ্ঠা করবে। ইসলামের সকল শিক্ষা ও আদর্শ‌ই তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত।

ইসলামে তাওহীদ কয়টি ও কি কি

তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি

ইসলামী শরিয়তে তাওহীদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

ইসলামে তাওহীদ ৩টিযথা:

  • তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ
  • তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ
  • তাওহীদুল আছমা ওয়াস্‌সিফাত

নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ

তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ হলো আল্লাহ একাই সব কিছু সৃষ্টি করেন এবং তা একাই পরিচালনা করেন। এসম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআন বলেন,

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ هَلْ مِنْ خَٰلِقٍ غَيْرُ ٱللَّهِ يَرْزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ

অর্থ: হে মানুষ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ব্যতীত কি কোন স্রষ্টা আছে যে তোমাদেরকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী হতে রুযী দান করে? তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। সুতরাং কিরূপে তোমরা সত্যবিমুখ হচ্ছ? সূরাঃ আল-ফাতির [35:3]

২. তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ

তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ বলতে এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করাকে বুঝায়। মানুষ একমাত্র আল্লাহর অনুগত্য স্বীকার করবে এবং শুধুমাত্র তার‌ই ইবাদত করবে।

যেসব বান্দা আল্লাহর অনুগত্য করে এবং শুধুমাত্র তার ইবাদত করে, তাদেরকে আল্লাহ তা’লা ‘মুমিন‘ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

৩. তাওহীদুল আছমা ওয়াস্‌সিফাত

তাওহীদুল আছমা ওয়াস্‌সিফাত অর্থ হলো আল্লাহ্‌কে তাঁর সকল নাম ও গুণাবলীতে এক ও অদ্বিতীয় সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ, কথা-বার্তা ও কাজ-কর্মে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস ও তা প্রতিষ্ঠিত করা।

উক্ত আলোচিত সকল বিষয় মিলিয়ে তাওহীদ। আপনি যদি এগুলোকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করতে চান, তাহলে তাওহীদের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। কেননা এগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।

তাওহীদ সম্পর্কে কুরআন কি বলে

তাওহীদ সম্পর্কে কোরআন একটি সূরা আছে সূরাতুল ইখলাস। কোরআনে আল্লাহ তা’আলা নিজের একত্ববাদের বর্ননায় এই সূরাটি নাযিল করেন। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“বলুন আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন,‌ বরং সবাই তার মুখাপেক্ষি। তিনি কাউকে জন্ম দেন না। এবং তাকে কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমতূল্য কেউ নেই।” [সূরা: ১১২, পারা: ৩০, পৃষ্ঠা: ৬০৪]

এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা ভুল-ত্রুটি থেকে নিজের পবিত্রতা সম্পর্কে কোরআনে বলেন,

“কোনো কিছুই তার সদৃশ নয়।”‌ [সূরা: ৪২:১১]

তাওহীদের গুরুত্ব

তাওহীদের গুরুত্ব

তাওহীদে বিশ্বাসের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা তাওহীদের জ্ঞান ছাড়া আল্লাহর প্রকৃতি, ক্ষমতা, মানুষের প্রতি তার দান এবং তার আদি অন্তহীন সত্তা সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।

📌 আরো পড়ুন 👇

যে কারণে শিরিকে লিপ্ত হওয়ার প্রবল সম্ভবনা তৈরি হয়। এজন্য তাওহীদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাতে হবে।

মানব জীবনে তাওহীদে গুরুত্ব

মানব জীবনে তাওহীদে বিশ্বাসের গুরুত্ব অপরিসীম৷  নিচে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. ইমানের মূল

ইসলামের যেসব মূল বিষয়ের উপর বিশ্বাস করতে হয়, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের মূল হল তাওহীদ।

২. সকল শিক্ষার ভিত্তি

ইসলামের সকল শিক্ষায় তাওহীদে বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। যা মানুষের জীবন-যাত্রাকে সহজ করে‌ তোলে

৩. সকল নবী-রাসূলের শিক্ষা

নবী হযরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত সকল নবী রাসূলের শিক্ষা ছিল তাওহীদ

৪. অসংখ্য প্রভুর দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ

এক আল্লাহর প্রভুত্ব স্বীকার করে নিলে অসংখ্য স্রষ্টার দাসত্ব হতে মুক্তি পাওয়া যায়।

তাওহীদে বিশ্বাসী মানুষ অন্য মানুষ, জড় পদার্থ বা অন্য কোনো শক্তি সামনে মাথা নত করে না।

৫. আত্মচেতনা ও আত্মমর্যাদাবোধ সৃষ্টি

তাওহীদে বিশ্বাস মানুষের আত্মসচেতনতা ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলে। যা সামাজিকীকরণের ব্যাপক ভূমিকা পালন করে ।

৬. ঐক্য সৃষ্টি

তাওহীদে বিশ্বাস সব বিভেদ ভুলিয়ে দেয়। কেননা এ বিশ্বাস মানুষেরা পৃথিবীর সকল কিছুকে আল্লাহর সৃষ্টি মনে করে সকলের সাথে সাদৃশ্য অনুভব করে। ফলে সমাজে ধনী-গরিব, উঁচ-নিচু, জাতি-বর্ণ, বংশের কোনো ভেদাভেদ থাকে না।

৭. উদারতার সৃষ্টি

যে তাওহীদে বিশ্বাস করে, তার উদারতার দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি হয়। সে সকলকে আপন ভাবতে শেখে। বিশ্বজাহানকে মনে করে আল্লাহর পরিবার। ফলে সমাজের শান্তি সৃষ্টি হয়।

৮. সংকল্পে দৃঢ়তা

তাওহীদে বিশ্বাসীকে কোন কিছুই তার সংকল্প থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। কেননা সে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস ও ভরসা রাখে।

৯. সৎকাজে প্রেরণা লাভ

তাওহীদে বিশ্বাসী মানুষ সৎ কর্মের প্রতি অনুপ্রেরণিত হন। কেননা তিনি এমন এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখেন যিনি সকল কিছু দেখেন। কাজেই এ বিশ্বাসের কারণ তার পক্ষে খারাপ কাজ করা সম্ভব হয় না।

তাওহীদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা ছাড়া আপনি প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবেন না। ফলে আপনি শিরিকে লিপ্ত হতে পারেন।

তাওহীদের মূল শিক্ষা কি

তাওহীদের মূল শিক্ষা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ‘ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই। এটি বিশ্বাস করা এবং বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠা করা।

একজন মুসলমানকে শুধু আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করতে হবে এবং একমাত্র তারই ইবাদত করতে হবে।

যারা এটি মেনে চলে তারা হলো মুমিন। এবং পরকালে তাদের স্থান হবে সুখময় জান্নাতে।

আর যারা অমান্য করে তাদেরকে কাফির বলে। তাদের জন্য রয়েছে চরম শাস্তি।

তাওহীদ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর

তাওহীদে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কি?

তাওহীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদের উপর বিশ্বাস এবং তার আনুগত্য করা।

তাওহীদ নাম রাখা যাবে কি?

হ্যাঁ অবশ্যই, আপনি চাইলে আপনার সন্তানের নাম তাওহীদ রাখতে পারেন।

তাওহীদুল ইসলাম নামের অর্থ কি?

তাওহীদুল ইসলাম নামের অর্থ হলো: ইসলামের ঐক্যবদ্ধ

তাওহীদ সম্পর্কে আমাদের মতামত

সকল মুসলমানদের তাওহীদ সম্পর্কে জানা উচিত।

আজকের আর্টিকেলে চেষ্টা করেছি আপনাদের তাওহীদ সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করতে। অনেকেই গুগলে সার্চ করেন তাওহীদ অর্থ কি, তাওহীদ কত প্রকার ও কি কি, তাওহীদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে।

আপনাদের একটি আর্টিকেলে সব কিছু আশা করি বোঝাতে পেরেছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন এবং তাওহীদ সম্পর্কে জানতে অন্যদের সুযোগ করে দেন।

এছাড়াও, আরও কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই মন্তব্য করবেন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। এতক্ষন প্রযুক্তির বাংলা ব্লগের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

পোষ্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment